mRNA ভ্যাকসিন : HIV এর বিরুদ্ধে অ্যানিমল ট্রায়ালে সফল!

mRNA ভ্যাকসিন : HIV এর বিরুদ্ধে অ্যানিমল ট্রায়ালে সফল!

mRNA ভ্যাকসিন : HIV এর বিরুদ্ধে অ্যানিমল ট্রায়ালে সফল!

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ [National Institutes of Health : NIH] এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস [National Institute of Allergy and Infectious Diseases : NIAID] এর বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি নেচার মেডিসিন জার্নালে এইচআইভি ভ্যাকসিন রিলেটেড একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে। সেখানে তারা দাবি করেছে, তাদের নতুন পদ্ধতিতে তৈরি mRNA ভ্যাকসিন এইচআইভি টাইপ ভাইরাসের বিরুদ্ধে ইঁদুর ও নন-হিউম্যান প্রাইমেটদের ওপর কার্যকারিতা দেখিয়েছে! উল্লেখ্য, বর্তমানে যে দুটি ভ্যাকসিন কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি কার্যকারিতা দেখিয়েছে, ফাইজার এবং মডার্না; এই দুটো কিন্তু এই নতুন mRNA প্রযুক্তিতে তৈরি। এইচআইভি ভ্যাকসিনের এই প্রজেক্টে মডার্নার রিসার্চাররাও যুক্ত ছিলেন। ভ্যাকসিনের ইতিহাসে হয়তো নতুন দ্বার উন্মোচন করতে যাচ্ছে, এই mRNA ভ্যাকসিন প্রযুক্তি!

#আরও পড়ুন » টেকনিক্যাল বনাম অনপেইজ এসইও!

mRNA ভ্যাকসিন আসলে কী?

এতদিন পর্যন্ত অর্থাৎ ট্র্যাডিশনালি ভ্যাকসিন তৈরি করা হতো ভাইরাল ভেক্টর দিয়ে কিংবা ইনঅ্যাক্টিভেটেড বা দুর্বল করা ভাইরাস দিয়ে। ভ্যাকসিন হিসেবে mRNA এর ব্যবহার নিয়ে যদিও ১৯৯০ সাল থেকেই কথা হচ্ছে, প্রথমবারের মতো সফল mRNA ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয় ২০২০ সালে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে! এবং এগুলো ছিল ফাইজার ও মডার্না ভ্যাকসিন! ফাইজার ও মডার্না ভ্যাকসিন সারাবিশ্বে আরও অন্যান্য সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে mRNA ভ্যাকসিন ব্যবহারের নতুন দিগন্ত রচনা করেছিল। তার ফল এখন পাওয়া যাচ্ছে!

mRNA বা মেসেঞ্জার আরএনএ মূলত এক ধরনের আরএনএ বা রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড, যা কোনো সেল / কোষের মধ্যে প্রোটিন এনকোড করে। তাদের এই ফাংশনকে কাজে লাগিয়ে mRNA ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়। এই ভ্যাকসিন শরীরে প্রবেশ করে ভাইরাল প্রোটিন তৈরি করে, এবং শরীরের ইমিউনো সিস্টেমকে সেই প্রোটিন ডিটেক্ট করে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সহযোগিতা করে।

করোনা ভাইরাস আর ফাইজার / মডার্নার উদাহরণ দিয়ে চিন্তা করলে ব্যাপারটা আমরা আরও ক্লিয়ারলি বুঝতে পারি। আমরা জানি, করোনা ভাইরাসের মেমব্রেনে স্পাইক প্রোটিন থাকে, যেটার মাধ্যমে ওরা আমাদের ফুসফুসের কোষের সাথে বাইন্ড করে বা যুক্ত হয়। তো, ফাইজার / মডার্না ভ্যাকসিন কারও শরীরে প্রবেশ করার পর, সেই স্পাইক প্রোটিন এনকোড করে কিংবা উৎপন্ন করে। যদিও এই স্পাইক প্রোটিন কাউকে ইনফেক্টেড কিংবা অসুস্থ করে না! এরপর ভ্যাকসিনেটেড পার্সনের ইমিউনিটি সিস্টেম ভ্যাকসিনের তৈরি প্রোটিনকে ফরেইন বডি হিসেবে ডিটেক্ট করে এবং তাকে অ্যাটাক করার জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করা শুরু করে দেয়।

#আরও পড়ুন » বিবর্তন

আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেমের একটি দারুণ ক্ষমতা হলো, তারা একবার যাকে ফরেইন বডি / প্রোডাক্ট হিসেবে ধরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে অ্যাটাক করে; সেই শত্রুকে তারা আর সারা জীবনেও ভুলে না! পরের বার যখনই তাদের দেখা পায়, সাথে সাথে অ্যাটাক করা শুরু করে দেয়। তো, mRNA ভ্যাকসিন এর মাধ্যমে আমরা ইনফেক্টেড না হয়েও, শত্রুদের চিনিয়ে দিই আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেমকে; ফলে এরপরে সত্যি সত্যি যদি শত্রু ঢুকেও পড়ে, তাদের আর রক্ষা নেই!

আচ্ছা mRNA ভ্যাকসিন সম্পর্কে তো জানা হলো; এবার আবার মূল টপিকে ফিরে যাওয়া যাক!

mRNA ভ্যাকসিন এইচআইবি [HIV] ভাইরাসের বিরুদ্ধে কীভাবে কাজ করছে?

গত কয়েক দশক ধরেই এইচআইভি মরণঘাতী সংক্রমক ভাইরাস হিসেবে অনেকের প্রাণ নিয়েছে। বিজ্ঞানীদের প্রাণান্তকর চেষ্টার পরেও পাওয়া যায়নি কোনো ইফেক্টিভ ভ্যাকসিন কিংবা কোনো কিউরেবল ট্রিটমেন্ট। আক্রান্ত হলেই মোটামুটি মৃত্যু নিশ্চিত। তো, সেই দুরাশার মধ্যে হয়তো আশার আলো নিয়ে এসেছে mRNA ভ্যাকসিন। এখন পর্যন্ত যত এক্সপেরিমেন্টাল এইচআইভি ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়েছে, তার মধ্যে এবারেরটার ইমপ্রুভমেন্ট সবচেয়ে বেশি।

তো, এই এক্সপেরিমেন্টাল এইচআইভি ভ্যাকসিনটি অনেকটাই করোনা ভ্যাকসিন [ফাইজার / মডার্না] এর মতো কাজ করে। ভ্যাকসিনটি ইনজেক্ট করার পর, ইনপুটেট mRNA প্রাণীর শরীরে Env & Gag [HIV ভাইরাসের দুটি প্রোটিন] এই প্রোটিন দুইটি তৈরি করে। এগুলো প্রাণীর শরীরে ভাইরাস-লাইক পার্টিকেলস তৈরি করে; যেটা অনেকটা এইচআইভি ভাইরাসের মতোই। এর ফলে শরীরে ইমিউনো রেসপন্স তৈরি হয়! যদিও এটা সত্যিকার অর্থে প্রাণীদেহকে ইনফেক্ট করতে পারে না, কারণ ভাইরাস লাইক পার্টিকেলে কোনো জেনেটিক কোড থাকে না আসল ভাইরাসের মতো।

পরে আসল ভাইরাস অ্যাটাক করলে, ইমিউনো সিস্টেম পুরোনো মেমরি ইউজ করে তাদেরকে অ্যাটাক করতে পারে!

#আরও পড়ুন » এক ভাষা সেনাপতির কথা!

এই mRNA ভ্যাকসিন এর মাল্টিপল বুস্টার ডোজ ইঁদুর ও প্রাইমেটদের ওপর অ্যাপ্লাই করে দেখা গেছে, আনভ্যাকসিনেটেড প্রাণীদের চেয়ে ভ্যাকসিনেটেড প্রাণীদের এইচআইভি ইনফেক্টেড হওয়ার রিস্ক ৭৪% কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

এই ভ্যাকসিন মানুষের ওপর ক্লিনিকাল ট্র্যায়ালে আসতে আরও অনেক অনেক ফেজ বাকি! তবে এই পর্যন্ত যে সফলতা পাওয়া গেছে, তাতে খুশি হওয়াটাও মন্দ কিছু নয়! mRNA ভ্যাকসিন হয়তো ভবিষ্যৎ পৃথিবীর রক্ষাকর্তা হয়ে, হাজার হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচাবে!

তথ্যসূত্র:

লেখক: আবুল হাসনাত বাঁধন [4th Year, Biotechnology & Genetic Engineering]

Share With Love:

মন্তব্য করুন: